খ্রীষ্টের মন্ডলী
প্রভুর মন্ডলী সম্পর্কে পরিচিতির অংশ হিসেবে, আমরা ড. রনি এফ. ওয়েডের নিম্নলিখিত প্রবন্ধটি উপস্থাপন করছি।
মথি ১৬:১৮-এ যীশু পিতরকে বলেন- আর আমিও তোমাকে কহিতেছি, তুমি পিতর, আর এই পাথরের উপরে আমি আপন মণ্ডলী গাঁথিব, আর পাতালের পুরদ্বার সকল তাহার বিপক্ষে প্রবল হইবে না। এই পদ থেকে আমরা দেখতে পাই, প্রভু যীশু তাঁর মন্ডলী প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এবং এই মন্ডলী পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
খ্রীষ্টের মন্ডলী শুধুমাত্র এক জাতির মানুষের জন্য সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং সেই সমস্ত জাতির মানুষের জন্য যাহারা সঠিকভাবে প্রভুর নামে ডাকেন। প্রভু তাঁর মন্ডলী প্রতিষ্ঠা করার বহু বছর আগে, ভাববাদী যিশাইয়র গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ২-৩ পদে এই কথা রেকর্ড করেছেন:"
শেষকালে এইরূপ ঘটিবে; সদাপ্রভুর গৃহের পর্বত পর্বতগণের মস্তকরূপে স্থাপিত হইবে, উপপর্বতগণ হইতে উচ্চীকৃত হইবে; এবং সমস্ত জাতি তাহার দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হইবে। 3 আর অনেক দেশের লোক যাইবে, বলিবে, চল, আমরা সদাপ্রভুর পর্বতে, যাকোবের ঈশ্বরের গৃহে গিয়া উঠি; তিনি আমাদিগকে আপন পথের বিষয়ে শিক্ষা দিবেন, আর আমরা তাঁহার মার্গে গমন করিব, কারণ সিয়োন হইতে ব্যবস্থা ও যিরূশালেম হইতে সদাপ্রভুর বাক্য নির্গত হইবে।
প্রভুর মন্ডলী সকল জাতির মানুষের জন্য হওয়ার আরেকটি ভবিষ্যদ্বাণী আছে দানিয়েল ২:৩৪-৩৫ -এ:
আপনি দৃষ্টিপাত করিতে থাকিলেন, শেষে বিনা হস্তে খনিত এক প্রস্তর সেই প্রতিমার লৌহ ও মৃন্ময় দুই চরণে আঘাত করিয়া সেইগুলি চূর্ণ করিল। 35 তখন সেই লৌহ, মৃত্তিকা, পিত্তল, রৌপ্য ও সুবর্ণ একসঙ্গে চূর্ণ হইয়া গ্রীষ্মকালীন খামারের তুষের ন্যায় হইল, আর বায়ু সেই সকল উড়াইয়া লইয়া গেল, তাহাদের জন্য আর কোথাও স্থান পাওয়া গেল না। আর যে প্রস্তরখানি ঐ প্রতিমাকে আঘাত করিয়াছিল, তাহা বাড়িয়া মহাপর্বত হইয়া উঠিল, এবং সমস্ত পৃথিবী পূর্ণ করিল।
এই দুইটি ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আমরা দেখি যে, প্রভুর মন্ডলী পৃথিবীর সমস্ত জাতির মানুষের মধ্যে একটি বিশাল সমাজ হয়ে উঠবে। এই মানুষগুলো হবে যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসবে এবং সম্মান করবে, এবং তাঁর সত্যের বাক্যকে সম্মাণ করবে।
প্রভুর মন্ডলী ছিল একটি ঐশ্বরিক মন্ডলী, মানুষসৃষ্ট বা মানবসৃষ্ট মন্ডলী নয়। এই মন্ডলী ঈশ্বরের বাক্যের সত্য এবং আদেশ অনুস্বরণ করবে, মানুষের মতবাদ এবং দর্শনের নয়। ইফিষীয় ৩:১০-১১- এ লেখা আছে:
উদ্দেশ্য এই, যেন এখন মণ্ডলী দ্বারা স্বর্গীয় স্থানস্থ আধিপত্য ও কর্তৃত্ব সকলকে ঈশ্বরের বহুবিধ প্রজ্ঞা জ্ঞাত করা যায়, 11 যুগপর্যায়ের সেই সঙ্কল্প অনুসারে যে সঙ্কল্প তিনি আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে করিয়াছিলেন।
খ্রীষ্টের মন্ডলীর পরিকল্পনাগুলো চিরন্তন মূলের ছিল — যা ঈশ্বর দ্বারা পরিকল্পিত এবং তাঁর পুত্র খ্রীষ্ট দ্বারা সম্পাদিত।
আজকাল যেসব মানব-প্রতিষ্ঠিত সংগঠন প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান, যেগুলো ‘গোত্র’ বা ‘ডিনোমিনেশন’ নামে পরিচিত, সেগুলো মানুষের সৃষ্টি—ঈশ্বরের নয়। প্রকৃতপক্ষে, এগুলো প্রায়ই তাদের প্রতিষ্ঠাতার নাম বা যেভাবে তারা পরিচালিত হয় সেই পদ্ধতির নামে নিজেদের পরিচয় দেয়। এটি ঐশ্বরিক কর্তৃত্বকে উপহাস করার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কেননা স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক; তিনি আবার দেহের ত্রাণকর্তা; -ইফষীয় ৫:২৩আবার কলসীয় ১:১৮-এ বলে- আর তিনিই দেহের অর্থাৎ মণ্ডলীর মস্তক; তিনি আদি, মৃতগণের মধ্য হইতে প্রথমজাত, যেন সর্ববিষয়ে তিনি অগ্রগণ্য হন।
---”আর এই পাথরের উপরে আমি আপন মণ্ডলী গাঁথিব,”-[যীশু খ্রীষ্ট , মথি ১৬:১৮]
খ্রীষ্টের মন্ডলী পরিচালিত হয় খ্রীষ্ট ও তাঁর সত্যবচন দ্বারা, যা সুসমাচার বা নতুন নিয়ম নামে পরিচিত। খ্রীষ্টই সর্বজনীন মস্তক। তিনি পৃথিবীতে কোনো প্রতিনিধি রাখেননি, যেমন কেউ কেউ দাবি করে থাকেন। ইফিষীয় ৫:২৭-এ লেখা আছে, যেন তাহার কলঙ্ক বা সঙ্কোচ বা এই প্রকার আর কোন কিছু না থাকে, বরং সে যেন পবিত্র ও অনিন্দনীয় হয়। প্রভু তাঁর মন্ডলীর মঙ্গলের জন্য এতটাই চিন্তিত ছিলেন যে তিনি আমাদের নতুন জীবনে চলার এবং সংযমী, ধার্মিক ও ন্যায়পরায়ণ জীবন যাপনের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে মন্ডলীর প্রভাবে পৃথিবীতে রক্ষা পায়। মন্ডলীর উদ্দেশ্য হল সুসমাচার প্রচার, সেবা ও দানশীলতা। এর সাথে কিছু যোগ করা বা কোনোভাবে পরিবর্তন আনা মানে ঈশ্বরের অপ্রসন্নতা ডেকে আনা।
আমাদের পরিত্রাণই সেই মূল কারণ, যার জন্য খ্রীষ্ট এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। যদি মানবজাতী পাপের মধ্যে একেবারে নিঃশেষ হয়ে না যেত, তাহলে যীশু আসতেন না। কিন্তু তিনি এসেছিলেন হাড়িয়ে যাওয়াদের খুঁজে বের করে তাদের উদ্ধার করতে (মথি ১:২১, লূক ১৯:১০, ১ তীমথিয় ১:১৫)। যেহেতু যীশু ক্রূশে মৃত্যু বরণ করেছিলেন, তিনি মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন আমাদের ধার্মিকতা প্রমাণের জন্য (রোমীয় ৪:২৫), এবং পরে তিনি ঈশ্বর পিতার কাছে ফিরে গিয়েছিলেন। তবে তিনি প্রেরিতদের প্রস্তুত করেছিলেন এক মহান কাজে—পৃথিবীকে পরিণত করার জন্য। আর এই কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল তাঁর মন্ডলীর মাধ্যমে। পৌল ইতি মধ্যে লিখেছেন ১ তীমথিয় ৩:১৫-এ— কিন্তু যদি আমার বিলম্ব হয়, তবে যেন তুমি জানিতে পার যে, ঈশ্বরের গৃহমধ্যে কেমন আচার ব্যবহার করিতে হয়; সেই গৃহ ত জীবন্ত ঈশ্বরের মণ্ডলী, সত্যের স্তম্ভ ও দৃঢ় ভিত্তি। প্রভুর সত্যকে হাড়ানো মানুষদের কাছে তুলে ধরা মন্ডলীর দায়িত্ব। এবং যারা সেই সত্যের আজ্ঞা পালন করে, প্রেরীত ২:৪৭ অনুসারে, তাদেরকে মন্ডলীতে যুক্ত করা হয়। যদিও মন্ডলী নিজে নিজে কাউকে রক্ষা করতে পারে না, খ্রীষ্টই পরিত্রাতা; তবে আমাদের পরিত্রাণ প্রভুর দেহে বা মন্ডলীর মধ্যেই রয়েছে। ইফিষীয় ৫:২৩-এ লেখা আছে—খ্রীষ্ট হলেন দেহের ত্রাণকর্ত্তা; ( ইফিষীয় ১:২২-২৩ পড়ুন)। খ্রীষ্টে থাকা মানেই তাঁর মন্ডলীর মধ্যে থাকা। আমাদের মধ্যে কেউ যদি পরিত্রাণ পায়, তবে তাকে অবশ্যই প্রভুর মন্ডলীর মধ্যে থাকতে হবে। তাই আশ্চর্য নয় যে, এক কবি কত সুন্দরভাবে লিখেছেন—
প্রভু, আমি ভালোবাসি তোমার রাজ্য, যেখানে তুমি অধিষ্ঠান করো। সেই মন্ডলী, যাকে আমাদের ধন্য উদ্ধারকর্তা নিজ রক্ত দিয়ে উদ্ধার করিয়াছেন। হে ঈশ্বর, আমি ভালোবাসি তোমার মন্ডলী, যার প্রাচীরসমূহ তোমার সামনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ায়। তোমার চোখের তারা সম প্রিয়, এবং তোমার হস্তে খোদিত হয়ে আছে চিরকাল।
ঈশ্বর মন্ডলীকে আর্শিবাদ করুন!!