পরিত্রাণের জন্য কি করা প্রয়োজন!!

আমরা কী করলে পাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি? এটি সত্যিই মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—এবং এর সঠিক উত্তর জানা অপরিহার্য। পরিত্রাণ পাওয়ার পথে প্রথম ধাপ হলো—এই সত্যটি স্বীকার করা যে আমাদের পরিত্রাণের প্রয়োজন আছে। পবিত্র ঈশ্বর, ন্যায়বান ও ন্যায্য বিচারক, এবং পবিত্র বাইবেল ঘোষণা করে: কেননা সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে-রোমীয় ৩:২৩

এই সত্যটি কোনো সৎ ব্যক্তি অস্বীকার করতে পারে না। "যদি আমরা বলি যে, পাপ করি নাই, তবে তাঁহাকে মিথ্যাবাদী করি, এবং তাঁহার বাক্য আমাদের অন্তরে নাই।" (১ যোহন ১:১০)

পাপ কী? পাপ হলো ঈশ্বরের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবাধ্যতা। "যে কেহ পাপাচরণ করে, সে ব্যবস্থা লঙ্ঘনও করে, আর ব্যবস্থা লঙ্ঘনই পাপ।" (১ যোহন ৩:৪)

কিন্তু তোমাদের অপরাধ সকল তোমাদের ঈশ্বরের সহিত তোমাদের বিচ্ছেদ জন্মাইয়াছে, তোমাদের পাপ সকল তোমাদের হইতে তাঁহার শ্রীমুখ আচ্ছাদন করিয়াছে, এই জন্য তিনি শুনেন না । -যিশাইয় ৫৯ :২

পরম করুণা ও অসীম প্রেমের ঈশ্বর আমাদের জন্য এমন একটি পথ প্রস্তুত করেছেন, যার মাধ্যমে সব পৃথিবীর সব মানুষ তাদের পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে। কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার এক জাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।" (যোহন ৩:১৬)

অবিশ্বাসের ফল কী? যীশু বলেন, " এই জন্য তোমাদিগকে বলিলাম যে, তোমরা তোমাদের পাপসমূহে মরিবে; কেননা যদি বিশ্বাস না কর যে, আমিই তিনি, তবে তোমাদের পাপসমূহে মরিবে।" (যোহন ৮:২৪)

যীশু কে?"শিমোন পিতর উত্তর করিয়া কহিলেন, আপনি সেই খ্রীষ্ট, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র।'" (মথি ১৬:১৬)

যোহন সুসমাচারের শুরুতেই আমরা জানতে পারি যে, যীশু খ্রীষ্ট ঈশ্বরের ঐশ্বরিক স্বভাবের অংশীদার। "আদিতে বাক্য ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বরের সহিত ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন।" (যোহন ১:১)

"আর সেই বাক্য মাংসে মূর্তিমান হইলেন, এবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন, আর আমরা তাঁহার মহিমা দেখিলাম, যেমন পিতা হইতে আগত একজাতের মহিমা; তিনি অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ।" (যোহন ১:১৪)

"কেননা তাঁহাতেই ঈশ্বরত্বের সমস্ত পূর্ণতা দৈহিকরূপে বাস করে;" (কলসীয় ২:৯)

পিতা ঈশ্বর যীশু সম্পর্কে বলেন: "কিন্তু পুত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, “হে ঈশ্বর, তোমার সিংহাসন অনন্তকালস্থায়ী; আর সারল্যের শাসনদণ্ডই তাঁহার রাজ্যের শাসনদণ্ড।-(ইব্রীয় ১:৮)

যীশু নিজে তাঁর সম্পর্কে কি বলেছিলেন? যীশু বলেন: "সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, অব্রাহামের জন্মের পূর্বাবধি আমি আছি।" (যোহন ৮:৫৮)

সুতরাং, যিশু হলেন চিরন্তন বাক্য, ঈশ্বরের পুত্র, এবং সেইজন্য তিনি ঈশ্বরত্বের অধিকারী। এই চিরন্তন বাক্যই মানব রূপ ধারণ করলেন (যোহন ১:১৪)। যেহেতু তিনি একইসাথে ঈশ্বরত্ব ও মানবত্ব ধারণ করেছেন, তাই যিশু একটি বিশেষ ও অনন্য ভূমিকা পালন করেন। “কারণ ঈশ্বর একজনই, এবং ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীও একজন — সেই ব্যক্তি খ্রীষ্ট যিশু, যিনি সকলের জন্য নিজেকে মুক্তিপণ স্বরূপ দিয়েছেন; এই সাক্ষ্য নির্ধারিত সময়ে প্রকাশিত হবে।” — (১ তীমথিয় ২:৫-৬)

এই সত্যগুলো বোঝার পর, আসুন এখন মূল প্রশ্নে আসি: আমরা কীভাবে উদ্ধার পেতে পারি? "কেননা আমি সুসমাচার সম্বন্ধে লজ্জিত নহি; কারণ উহা প্রত্যেক বিশ্বাসীর পক্ষে পরিত্রাণার্থে ঈশ্বরের শক্তি; প্রথমতঃ যিহূদীর পক্ষে, আর গ্রীকেরও পক্ষে।" (রোমীয় ১:১৬)

সুতরাং সুসমাচারই হলো পরিত্রাণের শক্তি, কিন্তু সুসমাচার আসলে কী? (‘সুসমাচার’ শব্দটির অর্থ হলো “সুসংবাদ” বা “শুভ সংবাদ”)।

" হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদিগকে সেই সুসমাচার জানাইতেছি, যে সুসমাচার তোমাদের নিকট প্রচার করিয়াছি, যাহা তোমরা গ্রহণও করিয়াছ, যাহাতে তোমরা দাঁড়াইয়া আছ; 2 আর তাহারই দ্বারা, আমি তোমাদের কাছে যে কথাতে সুসমাচার প্রচার করিয়াছি, তাহা যদি ধরিয়া রাখ, তবে পরিত্রাণ পাইতেছ; নচেৎ তোমরা বৃথা বিশ্বাসী হইয়াছ। 3 ফলতঃ প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন, 4 আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন;" (১ করিন্থীয় ১৫:১-৪)

এই কাজের মাধ্যমে যীশু আমাদের কী দিয়েছেন? " যাঁহাতে আমরা তাঁহার রক্ত দ্বারা মুক্তি, অর্থাৎ অপরাধ সকলের মোচন পাইয়াছি; ইহা তাঁহার সেই অনুগ্রহ-ধন অনুসারে হইয়াছে, " (ইফিষীয় ১:৭)

"কেননা যখন আমরা শত্রু ছিলাম, তখন যদি ঈশ্বরের সহিত তাঁহার পুত্রের মৃত্যু দ্বারা সম্মিলিত হইলাম, তবে সম্মিলিত হইয়া কত অধিক নিশ্চিত যে, তাঁহার জীবনে পরিত্রাণ পাইব।" (রোমীয় ৫:১০)

সুসমাচারের প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া কি গুরুত্বপূর্ণ? 

হ্যাঁ, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ!

আমরা কিভাবে “সুসমাচার মান্য করি” বা “গসপেল পালন করি”? যদি আমরা বিশ্বাস করি যে যিশুই প্রভু ও খ্রীষ্ট, তাহলে আমাদের অবশ্যই আমাদের পাপ থেকে মন ফিরিয়ে নিতে হবে (অর্থাৎ পাপ ত্যাগ করতে হবে)। যিশু বলেছিলেন, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তাহা নয়; বরং যদি মন না ফিরাও, 4 তোমরা সকলেই তদ্রূপ বিনষ্ট হইবে।" (লূক ১৩:৩)

এছাড়া বাইবেল আমাদের বলে যে, খ্রীষ্টকে স্বীকার ও বিশ্বাস করতে হবে- কারণ তুমি যদি ‘মুখে’ যীশুকে প্রভু বলিয়া স্বীকার কর, এবং ‘হৃদয়ে’ বিশ্বাস কর যে, ঈশ্বর তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপন করিয়াছেন, তবে পরিত্রাণ পাইবে। 10 কারণ লোকে হৃদয়ে বিশ্বাস করে, ধার্মিকতার জন্য, এবং মুখে স্বীকার করে, পরিত্রাণের জন্য।-রোমীয় ১০:৯-১০

এটা যদিও শেষ নয়। বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, আমাদের বিশ্বাসের অংশ হিসেবে খ্রীষ্টে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করাও অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।

অথবা তোমরা কি জান না যে, আমরা যত লোক খ্রীষ্ট যীশুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছি, সকলে তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছি? 4 অতএব আমরা তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তিস্ম দ্বারা তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছি; যেন, খ্রীষ্ট যেমন পিতার মহিমা দ্বারা মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইলেন, তেমনি আমরাও জীবনের নূতনত্বে চলি। 5 কেননা যখন আমরা তাঁহার মৃত্যুর সাদৃশ্যে তাঁহার সহিত একীভূত হইয়াছি, তখন অবশ্য পুনরুত্থানের সাদৃশ্যেও হইব। 6 আমরা ত ইহা জানি যে, আমাদের পুরাতন মনুষ্য তাঁহার সহিত ক্রুশারোপিত হইয়াছে, যেন পাপদেহ শক্তিহীন হয়, যাহাতে আমরা পাপের দাস আর না থাকি। -রোমীয় ৬:৩-৬

কারণ তোমরা যত লোক খ্রীষ্টের উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছ, সকলে খ্রীষ্টকে পরিধান করিয়াছ।-গালাতীয় ৩:২৭

আর এখন উহার প্রতিরূপ বাপ্তিস্ম- অর্থাৎ মাংসের মালিন্যত্যাগ নয়, কিন্তু ঈশ্বরের নিকটে সৎবিবেকের নিবেদন- তাহাই যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা তোমাদিগকে পরিত্রাণ করে ।-১পিতর ৩:২১

কিন্তু ঈশ্বরের ধন্যবাদ হউক যে, তোমরা পাপের দাস ছিলে বটে, পরন্তু শিক্ষার যে আদর্শে সমর্পিত হইয়াছ, অন্তঃকরণের সহিত সেই আদর্শের আজ্ঞাবহ হইয়াছ; 18 এবং পাপ হইতে স্বাধীনীকৃত হইয়া তোমরা ধার্মিকতার দাস হইয়াছ ।-রোমীয় ৬:১৭-১৮

বাপ্তিস্ম হল পানিতে সম্পূর্ণ নিমজ্জন, যা যিশুর মৃত্যু, কবরস্থ হওয়া এবং পুনরুত্থানের প্রতীক। বিশ্বাসের মাধ্যমে বাপ্তিস্ম গ্রহণের সময় একজন বিশ্বাসী খ্রীষ্টের প্রায়শ্চিত্তমূলক রক্তের অংশীদার হয় এবং সমস্ত পাপ থেকে শুদ্ধ হয় — নতুনভাবে জন্ম লাভ করে!

এগুলোই হল মুক্তি লাভ করার এবং একজন খ্রীষ্টিয়ান হওয়ার ধাপসমূহ! যীশু উত্তর করিলেন, সত্য সত্য, আমি তোমাকে বলিতেছি, যদি কেহ জল এবং আত্মা হইতে না জন্মে, তবে সে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারে না।

এরপর, এই সুন্দর বাক্যটি আপনার জন্য প্রযোজ্য হবেঃ কেননা অনুগ্রহেই, বিশ্বাস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ; এবং ইহা তোমাদের হইতে হয় নাই, ঈশ্বরেরই দান; 9 তাহা কর্মের ফল নয়, যেন কেহ শ্লাঘা না করে ।-ইফিষীয় ২:৮-৯

তখন যাহারা তাঁহার কথা গ্রাহ্য করিল, তাহারা বাপ্তাইজিত হইল; তাহাতে সেই দিন কমবেশ তিন হাজার লোক তাঁহাদের সহিত সংযুক্ত হইল।

-----আর যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছিল, প্রভু দিন দিন তাহাদিগকে তাহাদের সহিত সংযুক্ত করিতেন ।- প্রেরীত ২:৪৭

খ্রীষ্টিয়ানদের উচিত বিশ্বস্ততার সাথে জীবন যাপন ও উপাসনা করা, এবং প্রতি দিন আমাদের প্রভু ও পরিত্রাণকর্তার নিকটে আরও অগ্রসর হওয়া।

আর তাহারা প্রেরিতদের শিক্ষায় ও সহভাগিতায়, রুটি ভাঙ্গায় ও প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকিল । -প্রেরীত ২:৪২

আর ইহারই জন্য তোমরা সম্পূর্ণ যত্ন প্রয়োগ করিয়া আপনাদের বিশ্বাসে সদ্‌গুণ, 6ও সদ্‌গুণে জ্ঞান ও জ্ঞানে জিতেন্দ্রিয়তা, ও জিতেন্দ্রিয়তায় ধৈর্য, 7ও ধৈর্যে ভক্তি, ও ভক্তিতে ভ্রাতৃস্নেহ, ও ভ্রাতৃস্নেহে প্রেম যোগাও। 8কেননা এই সমস্ত যদি তোমাদের মধ্যে থাকে ও উপচিয়া পড়ে, তবে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের তত্ত্বজ্ঞান সম্বন্ধে তোমাদিগকে অলস কি ফলহীন থাকিতে দিবে না ।-২ পিতর ১:৫-৮

উপসংহারে বলা যায়, উদ্ধার বা পরিত্রাণ লাভের জন্য একজন ব্যক্তির যা করা প্রয়োজন, তা হলো—

  1. সুসমাচার শোনা- রোমীয় ১০:১৭;
  2. বিশ্বাস করা -মার্ক ১৬:১৬; যোহন ৩:১৬
  3. পাপের জন্য অনুশোচনা ও মন পরিবর্তন।-প্রেরীত ২:৩৭ ও লুক ১৩:৩
  4. যীশুকে ঈশ্বরের পুত্র ও প্রভু বলে স্বীকার করা- মথি ১০:৩২; রোমীয় ১০:৯-১০;
  5. বাপ্তিস্ম নেওয়া-মার্ক ১৬:১৬; যোহন ৩:৫; প্রেরীত ২:৩৮; রোমীয় ৬:৩-৬; গালাতিয় ৩:২৭; কলসীয় ২:১২; ১পিতর ৩:২১; প্রেরীত ১০:৪৭-৪৮;
  6. বিশ্বস্ত জীবনযাপন করা-লুক ৯:২৩; ইব্রীয় ১০:৩৮; প্রকাশীত বাক্য ২:১০

এটিও জেনে রাখুন—একজন খ্রীষ্টিয়ান হিসেবে আপনাকে নিঃসন্দেহে নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হবে। আর যত লোক ভক্তিভাবে খ্রীষ্ট যীশুতে জীবন ধারণ করিতে ইচ্ছা করে, সেই সকলের প্রতি তাড়না ঘটিবে । -২পিতর ৩:১২

তবে, যিশুকে অনুসরণ করাই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে উদ্ধার লাভ করা যায়। তাই, এটিই হলো জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পথ! যীশু তাহাকে বলিলেন, আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না (যোহন ১৪:৬)।

প্রিয় বন্ধু, আপনি কি উপরের বিষয়টি পড়ে আজই ঈশ্বরকে আপনার উত্তর দেবেন?

আর এখন কেন বিলম্ব করিতেছ? উঠ, তাঁহার নামে ডাকিয়া বাপ্তাইজিত হও, ও তোমার পাপ ধুইয়া ফেল । -প্রেরীত ২২:১৬

আমরা সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি। আমরা আপনাকে ভালবাসি।